বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩

হঠাৎ করেই আলোচনায় উঠে এসেছেন সৌম্য সরকার কিভাবে এবং কেন?




ইমার্জিং এশিয়া কাপের দল বাছাইয়ের সময় সৌম্যকে ডাকা হয়েছে সেই দলে। তবে সেই দলের সবাই যে সুবিধাটা পাচ্ছে না, সেটি আবার পাচ্ছে সৌম্য সরকার। সেই সুবিধাটি হল, ইমার্জিং এশিয়া কাপের দলে ডাক পেলেও সৌম্য অনুশীলন করছে বাংলাদেশের পরবর্তী ওয়ানডে সিরিজের দলের সাথে।


গুঞ্জন আছে চন্ডিকা হাতুরুসিংহের  চাওয়াতেই ডাকা হয়েছে তাকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সৌম্য ডাক পেয়ে করবেন টা কি? ওয়ানডে ভাবনায় তাকে কেন রাখা হল? তিনি কি এই সুযোগের প্রাপ্য?


একটু ফিরে গিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে চলে যাওয়া যাক। লিস্ট-এ টুর্নামেন্টের এই আসরে সৌম্য ছিলেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। ১১ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তিনি এখানে করেছেন ২৬.৬৪ গড়ে মাত্র ২৯৩ রান। সৌম্যর স্ট্রাইক রেটটাও আবার এখানে নাঈম কিংবা বিজয়ের চেয়ে অনেক কম- ৮৩.২৪। 


পুরো টুর্নামেন্টেই সৌম্য হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন একটা আর সেঞ্চুরি করেছেন সমান একটা। সেই হাফ সেঞ্চুরিটা আবার এসেছিল অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে। এই ম্যাচে সৌম্য ওপেন করতে নেমে ৫৬ রান করতে তিনি খরচ করেছিলেন ৯১ বল! একমাত্র সেঞ্চুরির ম্যাচে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের বিপক্ষে সৌম্য করেছেন ১১২ বলে ১০২! 


পুরো টুর্নামেন্টে এই দুটি ইনিংস ছাড়া আর কোথাও সৌম্য বলার মত রান করেননি। পুরো টুর্নামেন্টে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ১৬(১৯), আবাহনীর বিপক্ষে ১(৬), প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ১৭(১৫), লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের বিপক্ষে (১ম পর্বে) ৪১(২৬), শেখ জামাল ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে(১ম রাউন্ড)  ৮(১২), সিটি ক্লাবের বিপক্ষে ১৩(২০), ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে ৯(১২), সুপার সিক্সে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে ৮(৭), শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ২২(৩২)। এই রান নিয়ে সৌম্য ডাক পেয়েছেন সেমি-জাতীয় দলে। 


টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরারদের মধ্যে সৌম্যর অবস্থানও দুঃখজনক- ৪৬ তম!


তবে পুরো টুর্নামেন্টে তার ব্যাটিং পজিশন অনেকবারই রদবদল হয়েছে। তবে একটি ম্যাচ বাদে বাকি সব ম্যাচেই তিনি ১ থেকে ৪ এর মধ্যে ব্যাট করতে নেমেছেন। এখানে অবশ্য আরেকটা কথা বলে রাখা দরকার, মাত্র একটা ম্যাচেই তিনি চার নম্বরে নেমেছিলেন। তবে টপ অর্ডার ছাড়াও সৌম্যকে এক ম্যাচে লোয়ার অর্ডারেও ট্রাই করা হয়েছে এবং খুবই প্রত্যাশিতভাবে তিনি সাত নম্বরে ফেইল করেছেন। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে তার স্কোর ছিল ১২ বল খেলে ৮ রান! 


সৌম্য যে দুই ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছিলেন সেই দুই ম্যাচের একটা অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা এই ম্যাচে অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে বল করেছিলেন মোট ৮ জন বোলার। তবে এদের মধ্যে আবু হায়দার রনি আর বোলিং একশনের কারণে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া আরাফাত সানি ছাড়া আর কাউকেই আপনার চেনার কথা না। আবার এই যে ২ জন পরিচিত মুখ, এদের বিপক্ষেও সৌম্যর পারফরম্যান্স ভাল ছিল না। আবু হায়দার রনিকে ১২ বল ফেস করে ৭ বলই তিনি ডট খেলেছিলেন। বাকি ৫ বলে অবশ্য ৩ চার ও ২টা সিঙ্গেল নিয়ে তিনি ১৪ রান করেছিলেন। তবে আরাফাত সানির স্পিনে সৌম্যর দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মত। ১৯ বল খেলে সানির ১৩ বলই তিনি দিয়েছিলেন ডট। বাকি ৬ বলে ১ চার ও ৫ টা সিঙ্গেল নিয়ে তিনি নিয়েছিলেন ৯ রান। সৌম্য শেষ অব্দি নিজের উইকেটটা খুইয়েছিলেন এই সানির বলেই।  সানি ছাড়াও অগ্রণী ব্যাংকের দলে যে স্পিনাররা ছিল, তাদের বলেও সৌম্য যে খুব একটা স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন এমনটা বলা যাবেনা। অফ স্পিনার মোহাম্মদ শরিফুল্লাহর ৩০ বলে তিনি নিয়েছিলেন মাত্র ১১ রান, সেখানে আবার ২০ টা বলই ছিল ডট। বাঁহাতি স্পিনার আজিম নাজিরের বিপক্ষেও সৌম্য ১৭ বলের ১২ টাই ডট দিয়েছিলেন, নিতে পেরেছিলেন ১৩ রান।   


এবার সেঞ্চুরির ম্যাচে ফেরা যাক। টুর্নামেন্টের একদম শেষ দিকে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের বিপক্ষে সৌম্য সেঞ্চুরি করে ফেলে। ওপেন করতে নামা সেই ম্যাচে সৌম্যর পারফরম্যান্স ছিল এরকম-


মাশরাফির ২১ বলে ১২ টা ডট দিয়ে ১৩ রান


মুক্তার আলির ১১ বলে ২ টা ডট দিয়ে ১৮ রান


সোহাগ গাজীর ২০ বলে ১১ টা ডট দিয়ে ২১ রান


ডানহাতি লেগ স্পিনার জাওয়াদ রোয়েনের ২৯ বলে ১৭ টা ডট দিয়ে ১৫ রান


বাঁহাতি স্পিনার অনুপ কান্তি পালের ১৫ বলে ৯টা ডট দিয়ে ১৬ রান


ডিব্লি ডব্লি পেসার চিরাগ জানির ১৬ বলে ৭ টা ডট দিয়ে ১৯ রান


এই সারিগুলির দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন, স্পিনারদের বিপক্ষে রান করতে কতটা ধুকতে হয়েছে তাকে। এমনকি পড়ন্ত বেলায় মাশরাফিও যথেষ্ট ভুগিয়েছেন সৌম্যকে। শেষ অব্দি সৌম্যর উইকেট টা নিয়েছিলেন তিনিই। 


আবার সৌম্যকে আমরা যে ফ্লাইং স্টার্টের জন্যে দলে চাই, সেটিও কিন্তু তিনি কোন ম্যাচেই এনে দিতে পারেননি। সেঞ্চুরির ম্যাচটাতে প্রথম দশ বলে তিনি করেছিলেন ৫ রান, সেটাও আবার ৫ বল ডট দিয়ে। পরের ১০ বলেও সৌম্য ডট দিয়েছিলেন ৭ টা বলে। এই ম্যাচে সৌম্যর ডট বলের হার ছিল ৫১.৭৯%!  হাফ সেঞ্চুরির ম্যাচে সৌম্যর ডট বল রেট ছিল এটার চাইতেও বেশি- ৬৫.৯৩%। অনেকে অবশ্য পিচের কথাও বলতে পারেন। তবে এই পিচে ব্যাটিং করেই আবু হায়দার রনি ঐ ম্যাচে করেছিলেন ২৪ বলে ২২। এমনকি রিয়াদের ডট বলও এখানে ছিল সৌম্যর চেয়ে কম- ৪৩.৪৮%!  


তামিম ইকবাল চাইলে তাই সৌম্যকে দেখে বলতেই পারেন, “ফাইনালি আ ওর্থি অপোনেন্ট…”


এখন প্রশ্ন হল এই ভঙ্গুর ফর্ম নিয়ে তিনি জাতীয় দলকে আসলে দেবেন টাই বা কি? তার কি আদৌ কিছু দেওয়ার আছে? তাকে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট আসলে কি করতে চাইছে? 


টিম ম্যানেজমেন্টের একটা চাওয়া হতে পারে এমন যে তারা হয়তো সৌম্যকে সাত নম্বরের জন্যে চাইছে। কিন্তু সৌম্য কি আসলেই এই রোলটা পালন করতে পারবে? সৌম্যকে নিয়ে লোয়ার অর্ডারে পাঠানোর প্রয়াস কিন্তু আগেও দেখা গেছে। সেখানে সৌম্য খুব একটা সুবিধা করতে পারেন নি। সাত নম্বরে নামা ৩ ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় ১৫.৩, স্ট্রাইক রেট ৭৫.৪। এছাড়াও সৌম্যকে একবার ছয়ে ও আরেকবা পাঁচেও খেলানো হয়েছে। পাঁচ নম্বরে নেমে তিনি ১০ বলে করেছিলেন ৩ রান, ছয় নম্বরে নেমে ১৩ বলে ১৯ রান। 


সৌম্যকে তাই আবারও লোয়ার অর্ডারে ট্রাই করার ভাবনাটা অনেকটা পুরনো ব্যার্থ এক্সপেরিমেন্ট অবুঝ ল্যাবমেটের মত আবারও করে যাওয়ার মত। একটা জায়গায় একজন প্রুভেন ফেইলিউরকে ট্রাই করা মনে হয়না খুব একটা কার্যকরী সিদ্ধান্ত হবে। 


আবার সৌম্য যে নেমেই শুরু থেকে বোলারকে চার্জ করতে পারেন এমনটাও কিন্তু না। সৌম্যর সেই ২০১৫ এর মত স্বপ্নের বছরগুলি ধরেই বলছি, পাওয়ারপ্লে তে সৌম্যর ডট খেলার হার ৫৯.৪ শতাংশ। 


আবার সৌম্যকে যদি একজন পেস-বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে খেলানোর চিন্তাও করা হয়, সেটাও মনে হয়না খুব একটা ঠিক সিদ্ধান্ত হবে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেই ৮ ইনিংসে বল করে উইকেট নিয়েছেন মাত্র চারটে। এই সময়ে সৌম্যর ইকোনমি ছিল ৮.০৬! এমনকি প্রতি উইকেট নিতে তাকে দিতে হয়েছে ৪৫ রান করে। এমনকি ডিপিএল চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর বিপক্ষে তার দুই ম্যাচের বোলিং কার্ড হলঃ ২-০-২৩-১ এবং ৩-০-১৮-০। সবচেয়ে বেশি ওভার বল তিনি করেছিলেন গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স এবং শেখ জামাল ধানমন্ডির বিপক্ষে। এই দুই ম্যাচে সৌম্যর বোলিং কার্ড ছিল ৬-০-৫৩-০ এবং ৪-০-৪৪-১। 


এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশের যে পেস বোলিং ইউনিট সেখানে সৌম্য আদৌ দরকারি কিনা সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। 


সৌম্যকে তাই কেন ডাকা হয়েছে এই প্রশ্নটি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমাকে স্রেফ তাই বলতে হবে,


“এমনি”


(Photo of Soumya Sarkar is collected)


#iccworldcup2023 #BangladeshCricketTeam #BangladeshCricket #soumyasarkar #AsiaCup2023 #odicricket #bcb #BangladeshCricketBoard #stats #CricketStats

লেবেলসমূহ: ,

বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩

প্রেমাতাল পর্ব ২ মৌরি মরিয়ম



মুগ্ধ দেখলো তিতির অডিওটা সিন করেছে। যাক তাহলে নিশ্চই শুনছে এখন। শুনে হয়তো কাঁদছে, কিন্তু শান্তি তো পাচ্ছে! এটাই অনেক। ও কি একটা টেক্সট করবে? তিতির নিশ্চই রিপ্লে দিবেনা। তখন খারাপ লাগবে। এসব ভেবেও টেক্সট একটা করেই ফেলল,
"তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে।"
প্রায় সাথে সাথে মেসেজটা সিন করলো তিতির, কিন্তু রিপ্লে দিলনা। মুগ্ধ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো শুধু একটা রিপ্লে আসার জন্য। কিন্তু এলনা।
সারারাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে গানটা শুনলো তিতির। শুনতে শুনতে ভাবছিল ওদের প্রথম পরিচয়ের কথা। আহা! কি মিষ্টিই না ছিল মুহূর্তগুলো!!!
তিতিরের সাথে মুগ্ধর পরিচয়টা খুব অন্যরকমভাবে হয়। আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে "ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশ" এর একটা ইভেন্টে এটেন্ড করেছিল ওরা দুজনেই। ইভেন্টটা ছিল বান্দরবানে "নাফাখুম ট্যুর।"
তিতির এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফ্রি বসে ছিল। আর মুগ্ধ মাস্টার্স লাস্ট সেমিস্টারে উঠেছিল কেবল! ওটা ছিল তিতিরের সেকেন্ড ট্যুর উইদাউট ফ্যামিলি। প্রথমবার ফ্রেন্ডদের সাথে সিলেট গিয়েছিল এইচএসসি সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে। তিতির অবশ্যই খুব ভাগ্যবতী যে ওর ফ্যামিলি ওকে সব ধরনের স্বাধীনতা দিত যা অন্য অনেক মেয়েরা আজও পায়না।
"বাংলালিংক বাংলার পথে" নামক একটা টিভি প্রোগ্রামে ট্রাভেলর টিংকু চৌধুরী বান্দরবানের এক অপার সৌন্দর্যময় জলপ্রপাত নাফাখুমকে দেখিয়েছিল। তা দেখেই তিতিরের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল ওখানে যাওয়ার জন্য। তার কিছুদিন পরই ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে নাফাখুম ট্যুরের একটা ইভেন্ট দেখতে পেল। সাথে সাথে বাবা কে দেখালো, বাবা একটু দোনোমনা করছিল কিন্তু ভাইয়া বলল,
-"ওকে যেতে দাও বাবা। ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশ অনেক সেফ একটা গ্রুপ! আমার তখন ফাইনাল পরীক্ষা চলবে নাহলে আমিও যেতাম। তুমি চিন্তা করোনা তো, আমি জানি আমার বোন যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, তাছাড়া যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে সে সেভ করতে জানে, এন্ড দ্যাটসওয়াই আম প্রাউ অফ হার!"
সময়টা ছিল নভেম্বর মাস, শীতের শুরু। রাত ১০ টায় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়বে। ভাইয়া আর বাবা এসে ওকে বাসে তুলে দিল। ওকে দিতে এসে বাবা আরও চিন্তায় পড়ে গেল কারন, ইভেন্টে সবার সাথেই তাদের ফ্রেন্ডস, কাজিনস আছে কিংবা রিলেটিভস আছে, শুধু তিতিরের সাথেই কেউ নেই। তিতিরের অবশ্য এতে নিজেকে আরো ফ্রি ফ্রি লাগছিল। বাবা আর ভাইয়া ইভেন্ট ডিরেক্টর সাফি আর দোলা বলে গেল যাতে তারা ওর খেয়াল রাখে।
দোলা তিতিরকে ওর সিট দেখিয়ে দিল। তিতির বলল,
-"আপু, রেজিস্ট্রেশনের সময় আমি বলেছিলাম যে আমি জানালার পাশে সিট চাই এট এনি কস্ট!"
দোলা চিন্তায় পড়ে গেল। বলল,
-"সেকি! তোমার রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী এই সিটটাই তো তোমার! আচ্ছা, এই সিটটা যার সে আসুক আমি তার সাথে কথা বলে দেখি!"
তিতির হেসে বলল,
-"ওকে আপু, থ্যাংকস!"
দোলা চলে গেল। শীতের মৃদুমন্দ বাতাসে তিতিরের হালকা শীত করছিল, কিন্তু জানালাটা বন্ধ করতে ইচ্ছে হলোনা। তাই ওড়নাটা মাথায় পেঁচিয়ে নিল। সিটটা এলিয়ে আধশোয়া হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। ওড়নায় ওর মুখটা ঢাকা। ওর যে কি ভাল লাগছিল তা বলে বোঝানোর মত না। খুব ফ্রি লাগছিল নিজেকে! আগামী ১০ দিন ও একটা অন্য জগতে থাকবে। ওর স্বপ্নের জগৎ! যেখানে থাকবে শুধু প্রকৃতি, শুধু সৌন্দর্য। যেখানে থাকবে না কোন নাগরিক কোলাহল! হঠাৎ একটা ডাক ওর ভাবনার রাশ টেনে ধরল,
-"স্কিউজমি!"
ও তাকাতেই দেখতে পেল একটা ছেলে ব্যগপ্যাক হাতে দাঁড়িয়ে! ও তাকাতেই স্বাভাবিকভাবে বলল,
-"আপনার পাশের সিটটা আমার, আমি কি বসতে পারি?"
তিতির ছেলেটার ম্যানার্স দেখে মুগ্ধ হলো। কিন্তু তারপর হঠাৎই খেয়াল হলো ওর পানির ফ্লাস্কটা পড়ে ছিল পাশের সিটে, ম্যানার্সের কিছু না ছেলেটা ভদ্রভাবে ওর পানির ফ্লাস্কটা সরাতে বলছে। ও ফ্লাস্কটা সরিয়ে বলল,
-"সিওর, বসুন।"
-"থ্যাংকস।"
ছেলেটা নিজের ব্যাগপ্যাক উপড়ে উঠিয়ে দিয়ে বসল। তিতির মনে মনে ভাবলো এই ছেলেটা যদি গায়ে পড়া হয় আর সারা রাস্তা প্যাঁচাল পেড়ে ওর মাথা খারাপ করে দেয়! সিনেমা দেখে দেখে তো ছেলেরা ইন্সপায়ার হয় লম্বা জার্নিতে মেয়েদের সাথে লাইন মারার ব্যাপারে! তারপর ভাবলো গান শুনুক আর না শুনুক হেডফোন কানে দিয়ে রাখুক তাতে ছেলেটা কথা বলতে চান্স পাবেনা। এসব ভাবনা শেষ না হতেই দেখলো ছেলেটা নিজের গলায় ঝুলানো হেডফোনটা কানে দিয়ে সিটটা এলিয়ে শুয়ে পড়লো! যাক বাবা বাঁচা গেল! তার মানে ছেলেটা ওর সাথে আজাইরা প্যাঁচাল পাড়বে না।
বাস ছেড়ে দিল। কিছুক্ষণ পর একজন লোক সবার রেজিস্ট্রেশন কার্ড চেক করতে লাগলো। ছেলেটা হেডফোন খুলতেই তিতির ওকে বলল,
-"স্কিউজমি!"
-"হ্যা, বলুন!"
-"একচুয়েলি, এই সিটটা আমার আর আপনি যেটাতে বসেছেন ওটা আমার।"
-"ও আপনি কি আপনার সিটে আসতে চাচ্ছেন?"
-"না মানে, আমি বলতে চাচ্ছি আমি কি আপনার সিটটা ধার পেতে পারি? একচুয়েলি আমি জানালার কাছে ছাড়া বসতে পারিনা, অস্বস্তি লাগে। তাই আমি রেজিস্ট্রেশনের সময় বলেছিলাম জানালার পাশে সিট লাগবে আমার। ওনারা কেন দিলনা বুঝলাম না।"
-"ও, ইটস ওকে! নো প্রব্লেম!"
এরপর চেকার এসে ওদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড চেক করে গেল।
তারপর সাফি আর দোলা একটা স্পিচ দিল। দোলা শুরু করেছিল,
-"হ্যালো,
ডিয়ার ট্রাভেলার ব্রাদার্স এন্ড সিস্টার্স.. হোপ এভরিথিং ইজ ওকে স্টিল নাও।"
একথা বলেই আপু মিষ্টি একটা হাসি দিল। সেই হাসিতে মোটামুটি সবাই তাল মেলালো। তারপর সাফি ভাইয়া হেসে বলতে শুরু করলো,
-"ট্যুর প্ল্যান আপনারা সবাই কমবেশি জানেন, তবুও আরেকবার রিপিট করছি আমরা কোনো তাড়াহুড়োর ট্রিপ চাইনি। দৌড়ের উপর সব দেখা হয় ঠিকই কিন্তু উপভোগ করা যায়না, তখন ট্যুর হয় নট ট্রাভেলিং! তার উপর আমরা যাচ্ছি জঙ্গলে। তাই যেখানে ৬/৭ দিনে যাওয়া আসা হয় সেখানে আমাদের ১০ দিনের প্ল্যান! আজ রাত ১ টার দিকে কুমিল্লা পৌঁছে যাব, ওখানে আমরা আমাদের ডিনার করে নেব। তারপর আরেকটা টি-ব্রেক পাব ৩/৪ টার দিকে। সকাল ৬/৭ টার মধ্যে আমরা বান্দরবান শহরে পৌঁছে যাব। তারপর লাঞ্চ করে ওখা থেকে জিপে করে সোজা থানচি। পথে নিলগিরি, চিম্বুক পড়বে জাস্ট ১০ মিনিটের জন্য একটা ঢুঁ মারবো। তারপর আবার যাত্রা! থানচি পৌঁছাতে আমাদের দুপুর হয়ে যাবে। লাঞ্চ করবো ওখানেই। তারপর একটু রেস্ট নেব। যেহেতু থানচির পর আর কোন বাজারঘাট পাবো না তাই থানচি থেকেই পুরো ১০ দিনের বাজার করে নেব। বিকালটা আমরা বাজার করে আর পাশের একটা ছোট জলপ্রপাত ঘুরে কাটাবো। সন্ধ্যায় বার-বি-কিউ হবে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাব যাতে সকাল সকাল উঠতে পারি। আর থানচিতে আমরা তাঁবুতে থাকবো। পরদিন সকালে আমরা আবার রওনা দিব। কিন্তু নৌকায় করে, বাইরোড থানচি পর্যন্তই। রওনা দেয়ার আগে সবাই বাড়িতে কথা বলে নেবেন। কারন, থানচির পর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। প্রায় দুইদিন নৌকা ভ্রমনের পর আমরা যেখানে পৌঁছাব সেই যায়গার নাম রেমাক্রি। রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টা হাটার পর আমরা পৌঁছাব আমাদের স্বপ্নের নাফাখুম জলপ্রপাতে। তারপর আমরা ওই রাতটা পাশের পাহাড়ি গ্রামে কাটাব। তারপর কাছের আরো দুটো জল্প্রপাত দেখব পরেরদিন। তারপর যেভাবে গিয়েছি ওভাবেই ব্যাক করবো। আশা করি এই যাত্রার জন্য আপনারা সকলেই মানসিকভাবে প্রস্তুত। সকলের কাছে পরস্পরের প্রতি সহযোগীতার মনোভাব আশা করছি। এখন আমরা আর অপরিচিত নই, আমরা এখন একটা ফ্যামিলি। গ্রুপের কোন মেম্বার অন্য মেম্বারকে কোন বিষয়ে হ্যারাস করবেন না, ছোট করবেন না। যদি কারো নেগেটিভ আচরণ দেখা যায় তাহলে তাকে ওই মুহূর্তে ওই যায়গায় ফেলে চলে যাওয়া হবে। রান্নাবান্না সাধারণত মাঝিরাই করে। কিন্তু মাঝিদের আমরা সবাই সাহায্য করবো, মনে রাখবেন দশের লাঠি একের বোঝা। রেমাক্রির পর থেকে রাস্তায় আপনাকে প্রচুর জোঁক ধরবে তাই নিজের প্রতি ও সকলের প্রতি এক্সট্রা খেয়াল রাখবেন। যখনই দেখবেন আপনাকে জোঁকে ধরেছে আশেপাশে যারা থাকবে তাদের কাছে সাহায্য চাইবেন। আর যদি আপনি দেখেন আপনার পাশের মানুষটিকে জোঁকে ধরেছে তাহলে তাকে নিজ দায়িত্বে সাহায্য করবেন। আর সব শেষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলছি, পাহাড়িদের ড্রেসআপ বাঙালিদের মত হয়না, দয়া করে তখন নিজের চোখকে ও মুখকে সংযত রাখবেন। তাদের জীবন্যাত্রার প্রতি সম্মান রাখবেন। মনে রাখবেন ওখানে আমরা বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য পাহাড়িদের কাছেই যেতে হবে। কারন আবার মনে করিয়ে দেই থানচির পর মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। এতক্ষণ ধরে আমার বকবক শোনার জন্য ধন্যবাদ, হ্যাপি ট্রাভেলিং!"
তারপর আবার সেই সেম ঘটনা। ছেলেটা হেডফোন কাজে গুঁজে দিল। আর তিতির জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ একটা ডাক কানে এল,
-"স্কিউজমি। স্কিউজমি! এই যে শুনছেন?"
তিতির চোখ মেলে দেখলো পাশের ছেলেটা ওকে ডাকছে, হায়রে! কখন ও ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পায়নি! তিতির তাকাতেই ছেলেটা বলল,
-"সবাই ডিনার করতে নেমেছে। আমিও যাচ্ছি। আপনি বাসে একা ঘুমাবেন তাই ডাকলাম। কিছু মনে করবেন না।"
তিতির দেখলো পুরো বাসে কেউ নেই। বলল,
-"থ্যাংকস! কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি।"
-"হ্যা ভালই ঘুম আপনার, একটু আগে তো সাফি সবাইকে মিনি মাইকে বলল ২০-৩০ মিনিট ব্রেক টাইম। এর মধ্যে ডিনার সেড়ে নিতে হবে।"
তিতির লজ্জা পেয়ে গেল। আসলেই যখন তখন যেকোনো যায়গায় ঘুমিয়ে পড়ার প্রতিভাটা ওর ভালই আছে। বাস থেকে নামতে নামতে ছেলেটা বলল,
-"বাই দ্যা ওয়ে, আমি মুগ্ধ। আপনি?"
তিতির বলল,
-"কি ব্যাপারে?"
মুগ্ধ অবাক হয়ে বলল,
-"মানে?"
-"আপনি যে জিজ্ঞেস করলেন আমি মুগ্ধ কিনা ওটাই জানতে চাচ্ছি, কি ব্যাপারে মুগ্ধ হওয়ার কথা বলছেন? ট্যুর? বাট এটা তো মাত্র শুরু!"
ছেলেটা হেসে ফেলল,
-"আমার নাম মুগ্ধ। আমি আপনার নামটা জানতে চাচ্ছিলাম। বারবার স্কিউজমি স্কিউজমি করতে কার ভাল লাগে বলুন। আফটারল আগামী ১০ দিন একই যায়গায় থাকছি। নামটা তো জানা প্রয়োজন।"
তিতির লজ্জা পেয়ে হেসে বলল,
-"ওহ, আমার নাম তিতির।"
-"বাহ, নামটা খুব সুন্দর! তিতির নামের মানে জানেন?"
-"হুম, একটা পাখির নাম।"
মুগ্ধ রেস্টুরেন্টে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
-"তিতিরপাখি দেখেছেন কখনো?"
-"নাহ!"
-"তিতির খুব সুন্দর দেখতে।"
-"ঢাকায় আছে নাকি?"
-"নাহ, আমি ঝারখান্ডে দেখেছিলাম। রাঁচীর এক জঙ্গলে।"
-"বাপরে! আপনি খুব ঘোরাফেরা করেন নাকি?"
-"তা বলতে পারেন তবে আমি জঙ্গল প্রেমিক! পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরতে বেশি পছন্দ করি।"
-"ওহ! নাফাখুম গিয়েছেন আগে?"
-"হ্যা, দুইবছর আগে গিয়েছিলাম। এটা সেকেন্ড টাইম।"
-"আমার এই প্রথম।"
-"ওহ! আপনার সাথে কেউ নেই?"
-"নাহ! আমি একাই এসেছি। আচ্ছা আপনারা ছেলেরা মেয়েদের কোথাও একলা যেতে দেখলেই একথা জিজ্ঞেস করেন কেন?"
-"কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আসলে এই টাইপের ট্রিপে কখনো কোন মেয়েকে একা যেতে দেখিনি তো তাই। হয় ফ্রেন্ড, নয় বিএফ, নয় হাসবেন্ড, নয় কাজিন, নয়তো ভাই। কেউ কেউ সাথে থাকেই।"
-"আমার সাথে কাউকে লাগেনা। আই ক্যান টেককেয়ার অফ মাইসেল্ফ।"
-"আপনি বোধহয় রেগে যাচ্ছেন।"
-"নাহ, রেগে যাচ্ছিনা। সত্যি কথা বলতে কি আজকাল অনেক মেয়েরই যাওয়ার সাহসটা থাকে কিন্তু ফ্যামিলি যেতে দেয়না একা। সেক্ষেত্রে আমি বাঁধিয়ে রাখার মত একটা ফ্যামিলিতে জন্মেছি। আমি স্বাধীন, কখনো কেউ কোন কিছুতে বাধা দেয়না।"
-"বাধা দেয়না বলেই বোধহয় আপনি আপনার ফ্যামিলিকে রেসপেক্ট করেন। আর তাদের সম্মান বজায় রাখেন।"
তিতির হেসে বলল,
-"হ্যা। ওরা আমার ইচ্ছে অনিচ্ছার এত মূল্য দেয় বলেই আমিও ওদের কথা রাখার ট্রাই করি অলওয়েজ।"
সাফি ভাই দূর থেকে হাত নাড়ছে। মুগ্ধও হাত নেড়ে তার রিপ্লে দিল। বলল,
-"চলুন, খেতে বসা যাক।"
মুগ্ধ সাফিদের টেবিলেই বসলো। সাফি কার সাথে যেন কথা বলছিল। চোখাচোখি হতেই হাসি বিনিময় হলো শুধু। দোলা জিজ্ঞেস করল,
-"কি অবস্থা আপু? ভাল লাগছে?"
-"হ্যা, খুব।"
-"কোন প্রব্লেম হলে আমাকে বলবে, আসলে বুঝতেই তো পারছো এতগুলো মানুষ! আলাদা ভাবে খেয়াল রাখা ডিফিকাল্ট।"
-"ইটস ওকে আপু, আমি আপনাকে বলবো।"
দোলা হেসে বলল,
-"বাই দ্যা ওয়ে, মুগ্ধ ভাইয়ার সাথে আলাপ হয়েছে?"
মুগ্ধ বলল,
-"আরে উনি তো আমার পাশের সিটেই। আলাপ হবে না কেন?"
দোলা বলল,
-"ওয়াও, দেন গ্রেট! মুগ্ধ ভাইয়া তুমিও একা, ওনাকে একটু দেখে রেখো। উনি একা এই ট্রিপে।"
মুগ্ধ বলল,
-"তুই বলার আগে থেকেই দেখছি।"
তিতির চমকে তাকালো মুগ্ধর দিকে। দোলা বলল,
-"মানে?"
-"মানে সবাই বাস থেকে নেমে গিয়েছিল, তখনও উনি বাসে ঘুমাচ্ছিলেন। আমিই তো ডেকে নিয়ে এলাম। এটা দেখে রাখা হলোনা?"
দোলা হেসে বলল,
-"আচ্ছা বুঝলাম।"
খাওয়া শেষে উঠে যেতেই তিতির বলল,
-"বিল পে করতে হবে না?"
মুগ্ধ বলল,
-"না না, এটা ট্যুরের মধ্যেই। ওরাই দেবে। বাস ছাড়তে আরো ৪/৫ মিনিট বাকী। চলুন বাইরে গিয়ে দাঁড়ানো যাক।"
তিতির ওর সাথে যেতে যেতে বলল,
-"আপনার সাথে কেউ নেই?"
-"নাহ, আমি একাই ঘুরি অলওয়েজ। তাছাড়া আমার সাথে ঘোরার মত কেউ নেইও।"
-"ওহ! আচ্ছা, দোলা আপু আপনার পরিচিত? তখন দেখলাম তুই করে বলছেন।"
মুগ্ধ হেসে বলল,
-"ও সাফির গার্লফ্রেন্ড, আর সাফি আমার আপন চাচাতো ভাই। সেই সূত্রেই দোলার সাথে পরিচয়।"
-"ওহ! কে বড়?"
-"আমি সাফির ১ বছরের বড়।"
-"ওহ!"
কিছুক্ষণ ওরা হাইওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। প্রথমে কেউ কোন কথা বলছিল না। মুগ্ধই শুরু করলো,
-"আপনি কিসে পড়ছেন?"
-"এবার এইচএসসি দিলাম।"
মুগ্ধ অবাক হলো,
-"মানে এখনো ইউনিভার্সিটিতে যাননি?"
-"নাহ, পাবলিকে পরীক্ষা দিব তাই কোথাও এডমিশন নেইনি। এইতো ফিরে আসার পরই এক্সাম।"
-"তুমি তো পুরাই বাচ্চা। সরি তুমি করে বলে ফেললাম।"
-"ইটস ওকে। সাফি ভাইয়া, দোলা আপু তো প্রথম থেকেই তুমি বলে, আপনিই তো আপনি আপনি করছিলেন।"
-"ওহ! তাই না? ওই আর কি! আমি ওদের মত প্রথমেই কাউকে ওভাবে বলতে পারিনা।"
-"ও, আপনি কিসে পড়েন?"
-"ইস! আর চার মাস পরে কথাটা জিজ্ঞেস করতে যদি।"
-"তাহলে কি হবে?"
-"বলতে পারতাম আমার স্টাডি কম্পলিট।"
তিতির হেসে দিল। মুগ্ধ বলল,
-"আমি মাস্টার্স করছি। লাস্ট সেমিস্টার। এই এই বাস ছেড়ে দিচ্ছে, চলো চলো।"
বাসে উঠে বসতেই মুগ্ধ বলল,
-"এখন কি আবার ঘুমাবে?"
তিতির হেসে বলল,
-"আপনি কি আবার হেডফোন কানে গুঁজবেন?"
এবার মুগ্ধও হেসে দিল।
Next 

লেবেলসমূহ: ,

এক বছরে ১৪ টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। কোন কোন দেশের সাথে দেখে নিন


এক বছরে ১৪ টেস্ট খেলতে প্রস্তুত বাংলাদেশ? 
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট কম খেলে এই হতাশা অনেকদিনের, বাংলাদেশের জন্য আইসিসি টেস্ট ম্যাচ কম বরাদ্দ দেয় এই অভিযোগ নতুন না। কিন্তু ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কয়টি টেস্ট খেলবে জানেন কি? শুনে একটু অবাক হতে পারেন, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং ভারতের পর চতুর্থ সর্বোচ্চ ৩৪ টা টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। 
তারচেয়ে বড় কথা শুধু ২০২৪ সালেই ১৪ টা টেস্ট ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ! এক বছরে সবচেয়ে বেশি কয়টা টেস্ট খেলেছে এর আগে বাংলাদেশ? এই তথ্যটা আমার জানা নেই, আপনাদের জানা থাকলে জানাতে পারেন আমাকে। 
২০২৩ সালে বাংলাদেশের টেস্ট খেলার কথা ছিল মাত্র ৫ টা, কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটা টেস্ট কম হওয়ায় এবছর বাংলাদেশ টেস্ট খেলবে ৪ টা৷ বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ টেস্টের সিরিজ রয়েছে যেটা দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের নতুন WTC সাইকেল। 
কিন্তু ২০২৪ সালে বাংলাদেশের জন্য রয়েছে ১৪ টা টেস্ট ম্যাচ। সেগুলো একটু দেখে নেওয়া যাকঃ
ফেব্রুয়ারি-মার্চঃ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজে থাকবে ২ টেস্ট, যা WTC এর অন্তর্ভুক্ত। 
এপ্রিলঃ এপ্রিলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজে থাকবে ২ টেস্ট। 
জুলাই-আগস্টঃ আফগানিস্তানের বিপক্ষে আরব আমিরাতের মাটিতে হতে যাওয়া সিরিজে থাকবে ২ টেস্ট। 
আগস্টঃ পাকিস্তান সফরে থাকবে ২ টেস্ট, যা WTC এর অন্তর্ভুক্ত। 
সেপ্টেম্বর-অক্টোবরঃ ভারত সফরে থাকবে WTC এর অন্তর্ভুক্ত ২ টেস্টের সিরিজ।
অক্টোবরঃ সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজে থাকছে ২ টেস্ট যা WTC এর অন্তর্ভুক্ত।
নভেম্বর-ডিসেম্বরঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে থাকছে আরো ২ টেস্ট যা WTC এর অন্তর্ভুক্ত। 
অর্থাৎ, মোট সাতটা সিরিজের ১৪ টা ম্যাচের ভেতর পাঁচটা সিরিজের ১০ টা টেস্টই হবে WTC এর ২০২৩-২০২৫ সাইকেলের অন্তর্ভুক্ত। 
বাংলাদেশের মতো দল যারা খুব বেশি টেস্ট খেলেনা তাদের জন্য এক বছরে ১০ টা WTC এর টেস্টসহ ১৪ টা টেস্ট খেলা কি একটু চাপের হয়ে যাবেনা? 
কারন এগুলো শুধু টেস্ট ম্যাচের হিসাব, যেখানে দুটো বাদে বাকি ৫ সিরিজেই টেস্টের সাথে ওয়ানডে এবং/অথবা টি-টোয়েন্টি সিরিজ তো আছেই!  
আমার ব্যক্তিগত মতামত, এক বছরে ১৪ টেস্ট খেলার মতো ফিটনেস আমাদের অনেক প্লেয়ারের নেই, যার কারনে আমাদের প্লেয়ার রোটেশন পলিসিতে যেতে হবে, গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারদের WTC এর ম্যাচ গুলোতে খেলানো যেতে পারে আর নতুন প্লেয়ারদের আফগানিস্তান এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাজিয়ে দেখা যেতে পারে৷ 
কিন্তু WTC ম্যাচও তো কম না, ১০ টা!  
অন্য বড় দল গুলো অভ্যস্ত হলেও বাংলাদেশ এতো টেস্ট খেলে অভ্যস্ত না এক বছরে। প্লেয়ারদের ফিট রাখাটাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
পাশাপাশি আমার ধারণা আইসিসি এখানে ফেয়ার ফিক্সচার করতে পারেনি, যেখানে জুন ২০২৩ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত আমাদের ১২ টা ম্যাচ খেলার কথা সেখানে ২০২৪ সালেই ১০ টা দিয়ে রাখছে৷ আর কাউকে এতো চাপাচাপি করে সিরিজ দেয়নি কিন্তু। অন্যদের ফ্রি টাইম অনুযায়ী আমাদের ফিক্সচার সাজিয়েছে তারা৷ বাস্তবতা অবশ্য এটাই যে আমাদের এটা মেনে নিয়েই পারফর্ম করতে হবে৷

লেবেলসমূহ: ,

মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩

বাজবলের ওপেনিং জুটি কেমন? বাংলাদেশের কোমন?


টেস্ট ক্রিকেটে গত ২ বছরে ইংল্যান্ডের ওপেনিং পার্টনারশিপের অবস্থা কেমন? 
এক কথায় বললে,  টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলির মধ্যে ওপেনিং পার্টনারশিপের গড় বিবেচনায় ইংল্যান্ডের অবস্থান ৮ নম্বরে। ইংল্যান্ডের নিচে আছে শুধু বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড আর আফগানিস্তান। 
ওপেনিং পার্টনারশিপে সবচেয়ে বেশি গড়ে রান তুলেছে পাকিস্তান। গত দুই বছরে পাকিস্তানের ওপেনাররা গড়ে ৫০.৮২ হারে রান করেছে। ওপেনিং পার্টানারশিপে অর্ধশত গড় বজায় রাখাদের তালিকায় পাকিস্তান ছাড়া আর কেউ। তালিকার দুইয়ে যে শ্রীলঙ্কা, তাদেরও ওপেনিং পার্টনারশিপের গড় ৪৭.৭০। 
গড় বিবেচনায় তালিকাটা এরকম:
১/ পাকিস্তান- ৫০.৮২
২/ শ্রীলঙ্কা- ৪৭.৭০
৩/ নিউজিল্যান্ড- ৪২.২৩
৪/ ভারত- ৪০.১২
৫/ উইন্ডিজ- ৩৭.৮৭
৬/ দক্ষিণ আফ্রিকা- ৩৪.১৬
৭/ জিম্বাবুয়ে- ৩০.৭৬
৮/ অস্ট্রেলিয়া- ৩০.১৪
৯/ ইংল্যান্ড- ২৯.৭৬
১০/ বাংলাদেশ- ২৬.৫৬
১১/ আয়ারল্যান্ড- ৮.১২
১২/ আফগানিস্তান- ৬.১৬
এই টাইমস্প্যানে ইংল্যান্ড মোট ৬ জন ওপেনিং পার্টনারকে ট্রাই করেছে। ইংল্যান্ডের ওপেনিং পার্টারশিপগুলির গড় নিচের ছবিতে সংযুক্ত করে দেওয়া হল। 
এবার ২০২১ ঘুরে ২০২২ এ আসা যাক। ক্রাউলি আর ডাকেটের ওপেনিং পেয়ারটাই ইংল্যান্ডের ওপেনিং স্কোরকে দিয়েছে বড় ভরসা। ২০২১ থেকে না হলেও ২০২২ থেকে এই অব্দি জ্যাক ক্রাউলি ও বেন ডাকেটের ওপেনিং পার্টনারশিপ গড়ে রান তুলেছে ৫০ এরও ওপরে। তবে সবচাইতে মজার ব্যাপারটা অন্য জায়গাতে। সেটি হল এই দুই পেয়ার-এর রান রেট। ইংল্যান্ডের হয়ে তারা দুজন মিলে ওপেন করতে নেমেছেন এমন ইনিংসের সংখ্যা ১৪ টা। এই ১৪ ইনিংসে তারা প্রতি ৬ বলে করেছেন ৫.৭২ রান! 
গত দুই বছরে টেস্ট ক্রিকেটে এদের চাইতে বেশি দ্রুত রান তুলতে পেরেছে মাত্র ২ টা পার্টনারশিপ। তবে এই ২ পার্টনারশিপের রান আর সময় এত কম যে সেটাকে ঠিক ধর্তব্যে আনা যায়না। 
ইংলিশ ওপেনিং পেয়ারের চাইতে বেশি দ্রুত রান তোলা দুটি পার্টনারশিপই আবার করেছেন বাংলাদেশের ওপেনাররা। মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসানের ওপেনিং পেয়ারের রান রেট ছিল ৭.৫৭। তবে এই জুটি ওপেন করতে নেমেছিলেন মাত্র ২ টি ইনিংসে। তালিকার পরের নাম তামিম ইকবাল-লিটন কুমার দাস। এক ইনিংসে ওপেন করতে নেমে তাদের পার্টনারশিপের স্থায়ীত্ব ছিল মাত্র ৫ ওভার। এই ৫ ওভারে তাদের রান রেট ছিল ৬.৪০। 
তবে মিনিমাম ১০০ বল ফেস করেছে এমন ওপেনিং পার্টনারশিপের মধ্যে ক্রাউলি ও ডাকেটের চাইতে দ্রুত কেউই রান তুলতে পারেনি। শুধু পারেনি তাই-ই নয়, আর কোন ওপেনিং পার্টনার জুটি এ সময় রান রেটের কাঁটাটাকে ৫ এর বেশিও করতে পারেনি। তালিকার দ্বিতীয় নাম্বারে যে রোহিত-আগারওয়াল জুটি, সেটির রান রেটও ছিল ৪.৭২। 
ক্রাউকি-ডাকেট জুটির আরেকটা ব্যাপারও খেয়াল রাখতে হবে। মিনিমাম ১০০ বল ফেস করেছে এমন ওপেনিং জুটিগুলির মধ্যে ক্রাউলি আর ডাকেটের জুটির রান রেট দেখে আপনি চোখ কপালে তুলতে বাধ্য। লাল বলে এই ক্রাইটেরিয়ায় এই দুই জুটি রান তুলেছে ৬.২১ রেটে! এই ক্রাইটেরিয়ায় ৬ কেন, ৫ রানও তুলতে পারেনি কোন ওপেনিং জুটি।
আবার টেস্ট ক্রিকেট তো ছাড়ুন, এমনকি ওয়ানডে ফরম্যাটেও ওপেনিং জুটিতে ৬+ রান রেটে রান তুলেছে মাত্র দুটি দেশ। সেই দুটি দেশের একটি আবার ইংল্যান্ড নিজেই - ৬.৭১! তালিকার পরের নামটি অস্ট্রেলিয়ার- ৬.৩৬!  
ইংলিশ ওপেনিং পেয়ার নিয়ে তাই একদমই কোন কনক্লুশনে আসা যায়না। চলমান এশেজে হয়তো ডাকেট-ক্রাউলি জুটি এখন অব্দি বড় কোন স্কোরে পৌছাতে পারেনি। তবে এই জুটি নিয়ে এখনই সমাপ্তির সীমায় পৌছানো যায়না। টেস্ট ক্রিকেটের জেতা ম্যাচে যে ৬ এর বেশি রান তোলা যায়, এটা পুরো বিশ্ববাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই দুজন। 
ডাকেট-ক্রাউলি জুটির ওপর তাই আস্থা রাখতে হবে। এরাই সম্ভবত টেস্ট ক্রিকেটের 'বাজবল ওপেনিং' এর পাইওনিয়ার!
(Photo of English two openers is collected. The 3D bar chard photo is made by Sami) 
#Ashes2023 #englandcricket #australiacricket #cricket #buzzball #testcricket #openingpartner #zakcrawley

লেবেলসমূহ: ,

এক মুঠো রোদ নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা #part_1



চৌরাস্তার মোড়ে কপালে আড়াআড়িভাবে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।গায়ে সাদামাটা শাড়ি,লম্বা চুলে বেনুনি করা শ্যামবর্ণের মেয়েটির কপাল কুঁচকে আছে হালকা বিরক্তিতে।সেই ১২ টায় টিউশনি শেষ হয়েছে তার এখন প্রায় ১২ টা ৩০। এই অাধাঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো রিক্সার দেখা মিলছে না তার।তারওপর মাথার ওপর উত্তপ্ত সূর্য।মেয়েটির নাম রাদিয়ানা আহমেদ রোজা।সবাই রোজা নামেই ডাকে।কখনো শান্ত তো কখনো চঞ্চল....বৈশাখ মাসের কালবৈশাখীর মতো হুটহাটই মেজাজ পরিবর্তন হয় তার। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্তি যখন তুঙ্গে ঠিক তখনই পাশ থেকে একটা ছেলে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো -
.
এক্সকিউজ মি ম্যাম! আপনার কাছে কি সেলফোন হবে?
.
ছেলেটির কথায় ফিরে তাকালো রোজা।বিরক্তির সাথে চোখে-মুখে ফুটে উঠলো অপরিসীম কৌতূহল। সুঠাম দেহী ছেলেটির মাথায় ক্যাপ, চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস,গায়ে জড়ানো ব্লু জ্যাকেট।ছেলেটি ক্রমাগত চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে...যেনো নিজেকে কারো চোখের আড়ালে রাখতে চাইছে সে।তাকে দেখে রোজার প্রথম যে কথাটি মনে হলো তা হচ্ছে-"ছেলেটি কোনো সন্ত্রাসী টন্ত্রাসী নয় তো?" রোজার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে এলো মুহূর্তেই। অর্ধেক ঢাকা মুখটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর রোজার মনে হলো ছেলেটিকে সে চেনে।কোথাও একটা দেখেছে সে।কিন্তু কোথায়?আচ্ছা? এই ছেলেটা কোনো মোষ্ট ওয়ান্টেট ক্রিমিনাল নয় তো?যাদের ছবি প্রতিবেলার খবরের প্রধান খাবার হয়ে থাকে।জার্নালিস্ট বাবার মেয়ে রোজা...সেই হিসেবে কোনো মোষ্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালকে পরিচিত মনে হওয়া অবশ্যই দোষের কিছু না।।নিজের অজান্তেই ভ্রু কুঁচকে এলো রোজার।তার মাথায় ঘুরছে অদ্ভুত সব প্রশ্ন....আচ্ছা?ক্রিমিনালরা কি এতো হ্যান্ডসাম হয়?হতেও পারে...আজকালকার যুগে গ্যাংস্টাররাও সেইরম ফ্যাশনেবল হয়।সন্ত্রাসী বা ক্রিমিনাল বলে তাদের হ্যান্ডসাম বা ড্যাশিং হওয়া যাবে না এমন তো কোনো কথা নেই।নাহ্!! এমনটা ভাবা ঘোর অন্যায় হয়েছে রোজার....ভয়ানক অন্যায়।কিন্তু একটা গ্যাংস্টার তার কাছে সেলফোন চাইবে কেন?গ্যাংস্টারদের তো অনেক টাকা থাকার কথা....অদ্ভুত!! রোজাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তিভরা কন্ঠে আবারও বলে উঠলো ছেলেটি-
.
ম্যাম!হবে কি একটা সেলফোন?আই ব্যাডলি নিড আ ফোন জাস্ট ফর ফাইভ মিনিটস্....
.
ছেলেটার কথায় আবারও অবাক হলো রোজা।।কি অদ্ভুত একটা ব্যাপার....ছেলে
টার কন্ঠটাও এমন কেমন একটা পরিচিত লাগছে তার।যেনো প্রায়ই শুনে এই কন্ঠ।অনেক সময় সকাল, দুপুর,রাত প্রতিবেলা।আবারও ভ্রু কুঁচকে এলো রোজার,ছেলেটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই চমকে উঠলো সে।চট করে রাস্তার ওপাশের মস্ত বিল বোর্ডের দিকে তাকালো সে।বিল বোর্ডে ম্যাংগু জুস হাতে নায়িকার সাথে রোমান্সরত নায়ক আরিয়ান মৃন্ময়ের ছবি।রোজা বিস্ফারিত চোখে একবার বিল বোর্ড তো একবার ছেলেটির দিকে তাকাচ্ছে....দুজনেই সেইম!!তারমানে রোজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ও চিত্রশল্পী আরিয়ান মৃন্ময়?নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে।যার সাথে দেখা করার জন্য হাজারও মেয়েরা হা-হুতাশ করে মরে সেই আরিয়ান মৃন্ময় নাকি তার কাছে এসে সেলফোন চাচ্ছে!!তাও আবার মাঝরাস্তায়....কি অদ্ভুত!! আচ্ছা এটা রোজার কোনো স্বপ্ন নয় তো?বা কল্পনা?রোদের তাপে বোল্ড হয়ে এসব আজগুবি জিনিস দেখছে না তো?এসব এলোমেলো চিন্তা মাথায় নিয়ে হাত বাড়িয়ে সামনে দাঁড়ানো ছেলেটির কনুইয়ের খানিক উপরে চিমটি বসিয়ে দিলো রোজা।সাথে সাথেই "আহ্" শব্দ করে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো ছেলেটি।হাতের কনুইয়ের কাছে বাম হাতের তালু ঘষতে ঘষতে বলে উঠলো -
.
আর ইউ লস্টেট?
.
রোজা উত্তেজনায় মুখ চেপে ধরলো।ওহ্ মাই গড।এটা তো সত্যি আরিয়ান মৃন্ময়। ছেলেটি চারপাশে তাকিয়ে পকেট থেকে মাস্ক বের করে নাক মুখ ঢেকে নিলো।আশেপাশের মানুষ থেকে নিজেকে আড়াল করার কতো প্রচেষ্টা তার।রোজা এখনও মুখ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তার মাথায় একটি ওয়ার্ডই ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার....ইম্পসিবল!! ইম্পসিবল!! মৃন্ময় এবার কিছু বিরক্তি নিয়েই বলে উঠলো -
.
ওহ হ্যালো ম্যাম?আপনার কাছে কি ফোন আছে?আমি বিপদে পড়েছি...আমাকে একটু হেল্প করুন প্লিজ।
.
রোজা কিছু একটা ভেবে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে এগিয়ে দিলো।মৃন্ময় ফোনটা একরকম লুফে নিলো...একটা নাম্বার ডায়াল করে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফোনটা কানে নিলো।।ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই বলে উঠলো -
.
সোহেল? আমি মৃন্ময়....তুমি কি আসলেই গাধা??আমার সেলফোনটা সাথে দেওয়ার দায়িত্ব তোমার ছিলো।গাড়িতে তেল আছে কি না সেটাও চেইক করো নি।।তোমার কেয়ারলেসের জন্য আমি এখন মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি.....ওদিকে ফামহাউজে রুজি ওয়েট করছে।আমার পি এ হিসেবে তোমায় কি আরো বেশি কেয়ারফুল হওয়া উচিত ছিলো না?আমি মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে সাংবাদিকরা কোথা থেকে কি বের করে ফেলবে কে জানে??আর এটা আমার পার্সোনাল ম্যাটার....এটাকে আমি নিউজ বানাতে চাচ্ছি না।।তোমাকে আমি দশমিনিট মিনিট টাইম দিচ্ছি গাড়ি পাঠাও....নয়তো তোমার জবের কথা ভুলে যাও... গট ইট...ইডিয়ট!!
.
রোজার কানে মৃন্ময়ের কথাগুলো হালকা পাতলা কানে এলো।মনটা খুশিতে ডাকুমডুকুম নাচছে তার...নিশ্চয় মৃন্ময়ের সাথে কন্ঠশিল্পী রুজির চক্কর চলছে নয়তো ফামহাউজে পার্সোনাল কি কাজ থাকতে পারে??তবু একা একা?এই খবরটা বাবাকে দিতে পারলে নিশ্চয় বাবা তাকে জার্নালিজম নিয়ে পড়াশোনার জন্য পার্মিশন দিয়ে দিবে?ইয়াহু...মৃন্ময় এগিয়ে এসে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো-"থেংক্স ম্যাম" রোজা দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিয়েই উল্টো পথে হাঁটা দিলো।এখনই বাসায় পৌঁছাতে হবে তাকে।।বাবাকে তো জানাতে হবে ব্যাপারটা... আজই নিশ্চয় জার্নালিজম পড়ার পার্মিট টা পেয়ে যাবে সে!!মৃন্ময় সানগ্লাস চোখেই আড়চোখে রোজার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে....মেয়েটির লম্বা বেনুনি হাঁটার তালে হেলে-দুলে যাচ্ছে...দেখতে ভালো লাগছে তার।।সাদা-মাটা শাড়ি আর লম্বা চুলের বেনুনী পিচ্চি মেয়েটার মাঝে একটা মাধুর্যতা এনে দিয়েছে।।পুরাতন যুগের মেয়েদের মতো লাগছে তাকে.....এসব ভাবতে ভাবতেই একটা বিশাল গাড়ি এসে থামলো ওর সামনে।ড্রাইবার বেরিয়ে এসে ফোন আর গাড়ির চাবি দিয়েই চলে গেলো।।মৃন্ময় গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দ্রুত ছুটলো তার নিজের গন্তব্য।। আর রোজা নামের মেয়েটির স্মৃতিটুকু ফেলে গেলো এই চৌরাস্তা মোড়টাতেই...এক রৌদ্রজ্বল দুপুরের অব্যক্ত গরম বাতাসে...
.


লেবেলসমূহ: ,

প্রেমাতাল পর্ব ১ মৌরি মরিয়ম



ঘড়িতে রাত ১২:৫৬ । অনেকক্ষণ যাবৎ ফোনটা বেজেই চলেছে, তিতিরের হাত পা কাঁপছে। ফোন ধরার সাহস হচ্ছেনা। অবশেষে থাকতে না পেরে ধরেই ফেলল,
- হ্যালো
- যাক, অবশেষে দয়া হলো ফোনটা ধরার।
- আসলে আমি ফোনের কাছে ছিলাম না। তাই ধরতে পারিনি।
- আর সেদিন যে সারারাত কল দিলাম, সেদিন ধরোনি কেন?
- ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
- মিথ্যে বলোনা, অন্তত আমার কাছে।
- আসলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তা নাহলে তো পরদিন সকালের ফোনটাও ধরতাম না।
- সকালে ধরে তো লাভ নেই, অফিসে থাকলে কি কথা বলা সম্ভব?
- হুম বুঝেছি, বলো কি বলবে?
- কাল কি তুমি আমাদের এদিকে এসেছিলে?
চমকে উঠল তিতির, হ্যাঁ তিতির গিয়েছিল শুধু দূর থেকে মুগ্ধকে একবার দেখার জন্য। কিন্তু মুগ্ধ তো ওকে দেখেনি। তাহলে?
- কই না তো। কেন জিজ্ঞেস করছো?
- না মানে কাল সকালে যখন বেড়িয়েছি, কেন যেন মনে হচ্ছিল তুমি ওখানে ছিলে!
- নাহ আমি বাসাতেই ছিলাম।
- ও, আমি অবশ্য চারপাশ দেখেছি, কোথাও তোমাকে দেখতে পাইনি। তবু মানুষের মন তো, অনেকসময় অনেক কিছু ভেবে ফেলে। তাছাড়া ইদানীং তোমাকে বড্ড বেশি মিস করি!
তিতির মনে মনে ভাবতে লাগলো, মুগ্ধ কিভাবে বুঝলো। এটা কি ওর ভালবাসার জোড়? নাকি টেলিপ্যাথি? তবু বলল,
- এটা তোমার আমাকে কল দেয়ার একটা ছুতো মাত্র।
- তোমাকে কল করতে আমার কোন ছুতো লাগেনা, মন চাইলেও কল করিনা কারন আমি জানি ফোন রাখার পরই প্রতিবার কেঁদে সমুদ্র বানিয়ে ফেল তুমি।
- হুহ, আজাইরা কারনে কাঁদিনা আমি, ওকে?? চোখের জল এত সস্তা না আমার।
- চোখের জল বাজারে বেচা-কেনা হয়না যে তা সস্তা আর দামি বলে বিচার করবে! সে যাই হোক তুমি কি কি কারনে কি কি সিচুয়েশনে কত কত কাঁদতে পারো তা অন্তত আমার চেয়ে ভাল আর কেউ জানেনা।
বলেই হাসলো মুগ্ধ। রাগে তিতিরের শরীর জ্বলে গেল। বলল,
- পুরোনো কথা তুলছো কেন?
- পুরোনো কথা কোথায় তুললাম? পুরোনো কথা তুললে তো তোমাকে মনে করিয়ে দিতাম তুমি আমাকে কিভাবে কিভাবে আদর করতে। আদর করতে করতেও কতবার কেঁদেছো।
- তুমি টপিক চেঞ্জ না করলে আমি ফোনটা রাখতে বাধ্য হবো।
- তুমি চাইলেও এখন ফোন রাখতে পারবে না। কারন তোমার ভেতরে যে আরেক তিতির বাস করে সে চাইবে না।
রাগে অভিমানে কান্না পেল তিতিরের। কেন যে মুগ্ধ এমন করে। তিতির কান্না চাপানোর চেষ্টা করলো। মুগ্ধ বলল,
- তুমি কি কাঁদতে বসলা নাকি? এখন কাঁদলে কিন্তু চলে যাবো তোমার বাসায়, দুই গালে দুইটা চর মেরে আসবো।
- আমার অত ঠেকা পড়ে নাই যে আমি তোমার জন্য বসে বসে কাঁদবো। নিজেকে কি মনে করো তুমি?
- নিজেকে রাজপুত্র মনে করি, তুমি আরেক রাজ্যের রাজকন্য। কথা ছিল যুদ্ধে জয়ী হতে পারলে রাজকন্যা কে পাবো। যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিদের হারিয়ে জয়লাভ করার পরও পূর্ব শত্রুতার রেশ ধরে রাজকন্যার ভ্রাতা রাজামশাইয়ের মন বিষিয়ে দিয়েছেন। এখন এই রাজপুত্রের হাতে আর কিছুই নেই।
- এত বেহায়াপনা করতে কি তোমার একটুও লজ্জা লাগেনা?
- আমার লজ্জাশরম আগেও ছিল না, এখনো নেই, বিন্দুমাত্র নেই। তুমি তো জানোই।
- মিনিমাম এতটুকু লজ্জা থাকা উচিত যতটুকু থাকলে মানুষ বেহায়া বলবেনা।
- একটু বেহায়া হয়েও যদি তোমাকে পাওয়া যায় তো সেটুকু বেহায়া আমি হাজার বার হতে পারবো তিতির।
চোখের জল মুছে পানি খেয়ে গলাটা স্বাভাবিক করল তিতির, মুগ্ধকে কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না। মুগ্ধ ডাকল,
- তিতির
- হ্যা বলো।
- তুমি আমার কাছে চলে আসো প্লিজ। আমার ফ্যামিলিতে তো কোন প্রবলেম নেই, সবাই তোমাকে পছন্দ করে। তুমি তো জানোই। একবার আমাদের বিয়ে হয়ে গেলে তোমার ভাইয়া ঠিকই মেনে নেবে।
- আবার সেই পুরোনো কথা! তুমি কেন বোঝোনা সেটা সম্ভব হলে তো আরো অনেক আগেই করতাম।
- তুমি সম্ভব করলেই হবে।
- আচ্ছা একই কথা বলতে বলতে তুমি কি ক্লান্ত হওনা?
মনটা খারাপ হয়ে গেল মুগ্ধর। বলল,
- কেন তুমি অ্যাকটিং করছো? তুমিও তো আমাকে ছাড়া ভাল নেই।
- আমি মোটেই অ্যাকটিং করছিনা। অনেক ভাল আছি আমি।
- প্লিজ তিতির,এরকম করোনা। একা থাকতে থাকতে আমি বড্ড ক্লান্ত। তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না।
- আমার কিছু করার নেই। আমার ফ্যামিলির কথা আমাকে ভাবতেই হবে। তোমাকে আগেও বলেছি। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি যেতে পারবো না।
- আর কত ট্রাই করবো? তাদের রাজী করানোর সব চেষ্টাই তো করেছি। তারা যা বলেছে তাই করেছি। আর কি করতে হবে জিজ্ঞেস করো।
- তবু যখন মানছে না, তখন এত চেষ্টাই বা তুমি করছো কেন?
- কারন এখনো আমি তোমাকে ভালবাসি।
তিতিরের বুকের ভেতর ধ্ধক করে উঠল। মুখে বলল,
- এসব কথায় আজকাল আর আমার ভিতরে কিছু হয়না।
- কিছু হওয়ানোর জন্য বলিনি তিতির। একটু বোঝো আমাকে। তুমি না আমাকে সবচেয়ে বেশি বুঝতে!
- দিন বদলেছে তো। আজকাল অত কাউকেই বুঝিনা। বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।
- এত কঠিন হওয়ার ভান করছো কেন?
- আমি ভান টান করিনা তুমি সেটা জানো। আমি কঠিনই হয়ে গিয়েছি।
- আমাদের একসাথে কাটানো সব সুইট সময়গুলো, সব স্মৃতিগুলো ভুলে গিয়েছো?
- ভুলিনি কিছুই তবে ভোলা উচিৎ, এসব মনে রেখে কোন লাভ তো নেই। তাই ভোলার চেষ্টা করছি।
- পারবে ভুলতে?
- না পারার কি হলো? মানুষ পারেনা এমন কোন কিছুই নেই পৃথিবীতে।
- তাই? তাহলে বিয়ে করছো না কেন?
- আমার এখনো বিয়ে করার বয়স হয়নি তাই, আগে তো পড়াশুনা শেষ হোক।
- ঠিকাছে, দেখা যাবে।
- শোন তোমার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে, এজন্যই তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিয়ে করো, বউ আসলে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মুগ্ধ হেসে বলল,
- আমি অন্য কাউকে বিয়ে করলে তুমি সহ্য করতে পারবে? তাছাড়া আমার শরীরে তোমার যত খামচি আর কামড়ের দাগ আছে তা নিয়ে কি অন্য মেয়েকে বিয়ে করা যায়? করলেও এসব দাগ দেখলে আমাকে জুতোপেটা করে ডিভোর্স দিয়ে দেবে।
তিতিরের বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠল। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
- সেটা তোমার ব্যাপার তুমি কি করবে না করবে তুমি ভাল জানো। তোমার লাইফ, তোমার ডিসিশান।
- সেজন্যই এখনো অপেক্ষা করছি।
- অপেক্ষা করে কোন লাভ নেই। আমি কখনো পালাবো না।
- তাহলে তোমার ভাইয়াকে আরেকবার ধোলাই দেই কি বলো? এবার আর ৩ দিন না ৩০ দিন থাকার ব্যাবস্থা করে দেই হসপিটালে।
- হোয়াট?
চেঁচিয়ে বলল তিতির। মুগ্ধ বলল,
- হ্যাঁ, সেই অনেক বছর আগে ওর সাথে আমার কি একটা প্রবলেম হয়েছিল। সেটা ধরে এখনো বসে থাকবে কেন?
- তুমি হিরোগিরি দেখিয়ে ওকে মেরেছিলে কেন?
- ও আমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে বাজে কথা বলেছিল কেন?
- কারন ও জানতো না তোমার গার্লফ্রেন্ড ওর বোন।
- মারার সময় আমিও জানতাম না যে ও তোমার বড় ভাই। যাই হোক ও নিজের বোন সম্পর্কে বলছে সেটা জানুক আর না জানুক, যে কোন মেয়েই কারো না কারো বোন। তাই যে কোন মেয়েকেই বোনের চোখে দেখলে কারো মুখ দিয়ে ওই বাজে কথাগুলো বের হয় না। বুঝলে?
তিতর বুঝল মুগ্ধ রেগে গেছে, তাই আরো রাগানোর জন্য বলল,
- আচ্ছা সেটা নাহয় বুঝলাম, আমার ভাই দোষ করেছিল। কিন্তু তোমরা ব্যাচেলর বাসায় মেয়ে নিয়ে এসেছিলে কেন?
অবাক হলো মুগ্ধ,
- মেয়ে!! ও তমালের গার্লফ্রেন্ড ছিল তিতির। যে কিনা এখন তমালের বউ। আর গার্লফ্রেন্ড কি বয়ফ্রেন্ডের বাসায় যেতে পারে না? এই ব্যাপারটা তোমরা দুই ভাইবোন সহজ ভাবে নিতে পারো না কেন বলো তো। এমনভাবে "মেয়ে নিয়ে এসেছিলে" কথাটা বলছো যেন আমরা সবাই মিলে একটা মেয়েকে ভাড়া করে এনেছিলাম।
- মুখে লাগাম দাও।
- তোমাদের ভাবনা লাগামছাড়া হলে কোন দোষ নেই, আর আমার মুখটা লাগামছাড়া হলেই দোষ! একেই বলে কৃষ্ণ করলে লীলা...
- শোন ফালতু কথা কম বলো।
হেসে ফেলল মুগ্ধ। বলল,
- আচ্ছা দোষ যারই হোক, আমি অনেক মেরেছিলাম তাই তোমার বড় ভাইয়া আমার চেয়ে ছোট হওয়া স্বত্তেও তো আমি ওর পায়ে ধরে মাফ চেয়েছি। আর কি করলে ওর রাগ ভাঙবে বলো।
- ওর রাগ আর জীবনেও ভাঙবে না। ওর ইগোতে লেগেছিল।
- আচ্ছা ওর কথা বাদ দাও, ওর ইগো নিয়ে ও থাক। আমাকে এটা বলো যে তুমিও তো কত আমার বাসায় এসেছো। তাহলে তো সেটাও দোষের তাইনা? সেই দোষ মোচন করার জন্য আমাকে বিয়েটা করে ফেল।
- আমি তোমার ব্যাচেলর বাসায় কখনো যাইনি। গিয়েছিলাম তোমার ফ্যামিলি বাসায়। এবং তখন বাসায় সবাই ছিল, গোপনে লুকিয়ে চুরিয়ে যাইনি। বুঝেছো?
- হুম বুঝেছি।
- এখন রাখছি, প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।
হাসল মুগ্ধ। তিতির বলল,
- হাসছো কেন?
- এমনি।
- আচ্ছা, রাখছি গুড নাইট।
- গুড নাইট।
তারপরও কেউই ফোনটা কাটলনা। দুজনেই কিচ্ছুক্ষণ চুপ করে ফোনটা ধরে রইল। অনেক সময় শুধু নিরবতাই পারে নিশ্বাসের মধ্য দিয়ে একজন মানুষের অব্যক্ত কথাগুলো আরেকজনের কাছে পৌঁছে দিতে। অতঃপর মুগ্ধ বলল,
- রাখো।
ফোনটা রেখেই কান্নায় ভেঙে পড়লো তিতির। নিজের চুল ছিঁড়ল, হাত কামড়ালো, নিজের ওড়নাটাও ছিঁড়ে কুটিকুটি করলো। হঠাৎ একটা মেসেজ এল। হ্যাঁ মুগ্ধই পাঠিয়েছে,
" শান্ত হও, আমি এখনো মরে যাইনি যে তোমাকে এভাবে কাঁদতে হবে। আর তোমার হোয়াটস এ্যাপে একটা অডিও পাঠিয়েছিলাম, জানিনা কি কারনে সেটা এখনো ওপেন করোনি। আজ কি শুনবে একবার?"
তিতিরের দরকার হয়না বলে হোয়াটস এ্যাপ টা অনেক আগেই আনইন্সটল করে দিয়েছিল। তরিঘরি করে প্লে স্টোরে গিয়ে এ্যাপ টা ডাউনলোড করলো। আজ ডাউনলোড হতে যে কেন এত লেট হচ্ছে! উফফ!!!
অডিওটা প্লে করতেই প্রানটা জুড়িয়ে গেল তিতিরের। মুগ্ধ গাইছে,
"আমার ভিতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে..
ভাল আছি ভাল থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
দিও তোমার মালাখানি
হোওওওও..
দিও তোমার মালাখানি
বাউলেরই মানটারে..
আমার ভিতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে..
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক
খোলসের আবরনে মুক্তোর সুখ
তেমনি তোমার নিবিড় চলা
হোওওওও.."

next 


লেবেলসমূহ: ,

আয়ারল্যান্ডকে পরাজিত করল ওমান!

বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে আয়ারল্যান্ডকে পরাজিত করল ওমান! সেই আয়ারল্যান্ড, যারা গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ODI সিরিজে হারিয়েছিল। সেই আয়ারল্যান্ড, যারা গত বছর নিউজিল্যান্ডকে কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলেছিল। সেই আয়ারল্যান্ডকেই পরাজিত করল ওমান! 🔥

আইসিসির অ্যাসোসিয়েট মেম্বারদের এরকম উত্থান থেকে খুবই ভাল লাগছে। বিশেষ করে এশিয়া থেকে নেপাল, হংকং, ওমান, UAE-এর মতো দলগুলো বিগত কয়েক বছরে যথেষ্ট ভাল প্রদর্শন করেছে। এভাবেই সারা বিশ্বে ক্রিকেটের জয়জয়কার হোক 🏏❤️

লেবেলসমূহ: , ,